Header Ads

Header ADS

২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে দুই হাজার নারী-শিশু

 


গত বছর সারাদেশে ৬ হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা গেটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন। নিহতের মধ্যে ৯৭৪ জন নারী ও শিশু রয়েছে ১ হাজার ১২৮ জন। আর আহত হয়েছেন অন্তত আরো ১১ হাজার ৪০৭ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘দেশের যানবাহন ও সড়ক—দুটির কোনোটিই শিশুবান্ধব নয়। অনেক স্থানে বাড়ি, স্কুলের একদম ধারেই সড়ক দেখা যায়। সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে মেনে এসব তৈরি হয় না। আবার অনেক স্থানে স্কুলের পাশে কোনো সড়ক প্রতিবন্ধকতা বা ওভারপাস থাকে না। তাই এক অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের হচ্ছে দিনের পর দিন।’

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। এতে ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত হয়, আহত হয় ১১ হাজার ৪০৭ জন। মোট নিহতের ১৭ শতাংশের বেশি শিশু। গত বছর দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা এর আগের (২০২২) বছরের চেয়ে বাড়লেও কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা। দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় সামান্য কমেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশের বেশি শিশু মারা গেছে যাত্রী বা পণ্যবাহী বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারের ধাক্কায়। এরপর আঞ্চলিক বা গ্রামীণ সড়কের যানবাহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ১৬ শতাংশ শিশুর প্রাণ গেছে বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায়। স্থানীয়ভাবে তৈরি নছিমন, ভটভটি বা মাহিন্দ্র কেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ শিশুর প্রাণ।

এদিকে বর্তমানে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটারের বেশি। গ্রামীণ সড়ক ৩ লাখ কিলোমিটারের বেশি। দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৩৭ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে। এরপরই আছে মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শহরের সড়ক।

রোড সেফটির বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কে আগের বছরের (২০২২) চেয়ে গত বছরে শিশুমৃত্যু কমেছে। কিন্তু বেড়েছে আঞ্চলিক সড়কে। যেসব দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিশুদের মৃত্যু হয়, এর এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটে দুপুরের দিকে। তবে সকাল ও বিকেলের দিকেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ শতাংশেরই বয়স ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এরপরই আছে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু। নিহত শিশুদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ এই বয়সী।

দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৩৭ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে। এরপরই আছে মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শহরের সড়ক।

এছাড়া প্রতিবেদনে জানা গেছে, নিহতের মধ্যে ৯৭৪ জন নারী ও শিশু রয়েছে ১ হাজার ১২৮ জন। মোট ২ হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট নিহতের ৩৮.১২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৬৩ শতাংশ।

এ ছাড়া দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২.২৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন, অর্থাৎ ১৪.৪৩ শতাংশ।

এই সময়ে ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাস যাত্রী ২৭৪ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর ট্রলি-লরি আরোহী ৩৮৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ যাত্রী ২২৯ জন, তিন চাকার যানের যাত্রী ১ হাজার ২০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৩টি জাতীয় মহাসড়কে, ২ হাজার ৮৮৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯৯৪ টি গ্রামীণ সড়কে, ৫৮৩ টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪ টি সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ২৯১টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩ হাজার ১৪৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১ হাজার ৪৪৬টি পথচারীকে চাপা/ধাকা দেয়া, ৮১৭টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২০৮ টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১১ হাজার ৩৬৬টি। এর মধ্যে বাস ১ হাজার ৫০৩, ট্রাক ১ হাজার ৮০৬, কাভার্ডভ্যান ২৮৩, পিকআপ ৪৩২, ট্রলি ১৭৮ ও লরি ১১৪টি অন্যতম। দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোরে ৩২১টি, সকালে ১ হাজার ৯৪৬টি দুপুরে ১ হাজার ৫৭১টি, বিকেলে ১ হাজার ১১৩টি, সন্ধ্যায় ৬১৮টি এবং রাতে ১ হাজার ৩৪২টিদুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১ হাজার ৯৬৭টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৯৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীতে ২৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৩ জন নিহত এবং ৩৩৬ জন আহত হয়েছেন।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.